পূজো পরীক্ষা: উৎসবের সময় পড়ুয়াদের সংগ্রামের আখ্যান
উৎসবের আনন্দ যখন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন ছাত্রজীবনের এক বিশেষ সংগ্রাম শুরু হয়—পূজোর সময়ে পরীক্ষা। বাঙালির জীবনে দুর্গাপূজা একটি মহোৎসব, কিন্তু ছাত্রদের জন্য এই সময় মানেই দ্বৈত সংগ্রাম। একদিকে পড়ার চাপ, অন্যদিকে চারপাশের উৎসবমুখর পরিবেশ। এই দ্বন্দ্ব ছাত্রদের জীবনে এক গভীর প্রভাব ফেলে।
Photo Source -Google
উৎসবের আবেশ এবং পড়াশোনার চ্যালেঞ্জ
দুর্গাপূজার সময় চারপাশে ঢাকের বাদ্যি, প্যান্ডেলের আলো, এবং মানুষের কোলাহল ছাত্রদের মনোযোগ বিভ্রাট ঘটায়। এমন সময় সিলেবাসের বিশাল চাপ এবং প্রস্তুতির ঘাটতি ছাত্রদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে।
পরীক্ষার সময়সূচি:
প্রায়শই পূজোর পরেই স্কুল-কলেজের পরীক্ষা শুরু হয়। অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষকরা সিলেবাস শেষ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, যার ফলে ছাত্রদের জন্য প্রয়োজনীয় সময় থাকে না।
উৎসব বনাম কর্তব্যের দ্বন্দ্ব:
পারিবারিক চাপ: বাড়ির বড়রা উৎসবে সামিল হতে বললেও পড়াশোনার জন্য সময় দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন।
সামাজিক বাধ্যবাধকতা: বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখা বা আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাটানোর ইচ্ছা পড়াশোনার সময় কমিয়ে দেয়।
মনোযোগ হারানো: পূজোর আনন্দে হারিয়ে পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখা খুব কঠিন হয়ে যায়।
ছাত্রদের সংগ্রামের দিকগুলি
১. সময় ব্যবস্থাপনা:
পূজোর সময় সময় ভাগাভাগি করে পড়াশোনা করাটা ছাত্রদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকে রাত জেগে পড়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু এতে শারীরিক ক্লান্তি বেড়ে যায়।
২. উৎসবের প্রতিকূল প্রভাব:
পূজোর সময় কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ পড়াশোনার পরিবেশকে ব্যাহত করে।
ঠাকুর দেখার জন্য রাত জেগে ঘোরা শরীর এবং মনকে দুর্বল করে।
খাবার-দাবারের অনিয়ম এবং অতিরিক্ত উৎসাহ পড়ার দক্ষতাকে ক্ষীণ করে।
৩. মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা:
অনেক ছাত্র পূজার আনন্দ উপভোগ করতে না পারায় হতাশায় ভোগেন। আবার, যারা পূজা উপভোগ করেন, তারা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে পিছিয়ে পড়ার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
পূজো পরীক্ষার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার উপায়
১. সময়সূচি তৈরি করা:
পূজোর সময় পড়াশোনার জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করা প্রয়োজন। উৎসবের মাঝে অল্প সময়ের জন্য হলেও নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে।
২. মস্তিষ্কের চাপ কমানো:
পূজার মধ্যে সামান্য বিশ্রাম এবং অবসরের সময় রাখা উচিত।
পূজোর আনন্দ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন না হয়ে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার।
৩. পরিবার এবং শিক্ষকদের ভূমিকা:
পরিবারের উচিত ছাত্রদের মানসিক চাপ কমানো এবং পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টি করা।
শিক্ষকরা পূজোর সময়ে ছাত্রদের সাহায্যের জন্য অতিরিক্ত ক্লাস বা অনলাইন সাপোর্ট দিতে পারেন।
উপসংহার
পূজো পরীক্ষা ছাত্রজীবনের একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। এটি ছাত্রদের সময় ব্যবস্থাপনা, ধৈর্য, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। যদিও পূজার আনন্দ উপভোগের সঙ্গে পড়াশোনার ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন, তবে এটি ভবিষ্যতের জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। পূজো এবং পরীক্ষা—দুইয়েরই মর্ম উপলব্ধি করে চলার মধ্যে দিয়েই ছাত্ররা তাদের সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে।
No comments:
Post a Comment